আমের নতুন রাজধানী নওগাঁ থেকে গত বছর ১৫ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছিল। এবার বিদেশে পাড়ি দিবে ১০০ মেট্রিক টন আম। এই আমের মধ্যে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগান থেকেই যাবে ৫০ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার নওগাঁ থেকে বিশ্বের আটটি দেশে আম রপ্তানি হবে। দেশগুলো হচ্ছে- যুক্তরাজ্য, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। এসব দেশে ১০০ মেট্রিক টন আমের চাহিদা রয়েছে।
সাপাহার উপজেলার ‘রূপগ্রাম’ ও ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ এর উদ্যোক্তা সোহেল রানা জানান, তার বাগানে রয়েছে আম্র্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, মিয়াজাকিসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম।
তিনি বলেন, এবার আম্র্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, ব্যানানা ম্যাংগো, কাটিমন এবং অস্টিনসহ কয়েক জাতের আম রপ্তানির আশা করছি। গত বছর আমার বাগান থেকেই ইংল্যান্ড ও কাতারে আম্র্রপালি এবং ব্যানানা ম্যাংগো জাতের ৮ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করেছিলাম এবং দামও ভালো পেয়েছিলাম।
সোহেল রানা জানান, ‘এ বছর জার্মানি, ফিনল্যান্ড, দুবাই, সৌদি আরব, ইংল্যান্ড, কাতার, সুইডেন ও ওমানে ৫০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির জন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ফ্রুটব্যাগিং ও নিরাপদ আম উৎপাদন করা হয়েছে। আম বিক্রিতে দেশে যে দাম পাওয়া যায় তার থেকে দ্বিগণ দাম পাওয়া যায় রপ্তানি করলে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী আরও জানান, তার বাগান থেকে আম রপ্তানি শুরু হবে এ মাসের ২৫ তারিখ থেকে। প্রথম চালানে যাবে আম্রপালি আম। এরপর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে যাবে ব্যানানা ম্যাঙ্গো।
আম বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন জুমবাংলাকে জানান, ‘নওগাঁর আম চাষীদের মধ্যে এখন অন্যতম সোহেল রানা।
বাণিজ্যিকভাবে নিরাপদ আম চাষে তার ক্যাপাসিটি অনেক বেড়েছে। আমি ইতোমধ্যে তার বাগান দু’বার পরিদর্শন করেছি। আমের গুণগত মান ঠিক আছে। রপ্তানির জন্য যে রকম আম দরকার সোহেল রানার বাগানে সে রকমই আম আছে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর রপ্তানির জন্য নওগাঁর আমের প্রচুর চাহিদা ছিল কিন্তু আমরা সে অনুযায়ী পাইনি। সোহেল রানার দেখাদেখি এবার অনেকে নিরাপদ আম চাষে এগিয়ে এসেছেন। এ বছর নওগাঁ থেকে আম রপ্তানির চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে।’
২০১৫ সালে সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে সোহেল রানা নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার রূপগ্রামে গড়ে তোলেন ‘রূপগ্রাম এগ্রো ফার্ম’। এরপর সাপাহার উপজেলার গোডাউনপাড়ায় গড়ে তোলেন ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ নামে আরেকটি কৃষি খামার। বর্তমানে তাঁর মোট ১৫০ বিঘার খামারে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের আম। আম ছাড়াও তার খামারে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির লিচু, পেয়ারা, ড্রাগন ফল, মাল্টাসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফলের গাছ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আম্রপালি ৭৬ শতাংশ, আশ্বিনা ৭ শতাংশ, বারি-৪ আম ৬ শতাংশ, ফজলি ৩ শতাংশ, ল্যাংড়া ৩ শতাংশ, ক্ষীরসাপাত ২ শতাংশ, গৌরমতি ১ শতাংশ, কাটিমন ১ শতাংশ এবং অন্য জাতের ১ শতাংশ জমিতে আমের বাগান রয়েছে।
প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন। সে হিসেবে নওগাঁয় এবার প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিন টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, পত্নীতলা, ধামইরহাট ও নিয়ামতপুর উপজেলার কিছু অংশ বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। এসব এলাকার জমিতে চাষীরা ঝুঁকছেন আম চাষে। এ জেলার আম অত্যন্ত সুস্বাদু। ক্রেতাদের কাছেও মোটামুটি চাহিদা রয়েছে।
বিদেশে আম রপ্তানির জন্য নওগাঁর সোহেল রানাসহ বেশ কয়েকজন আম চাষিকে প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ আম প্রস্তুতের জন্য পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এসব বাগান থেকেই আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে।
বিদেশে আম রপ্তানির পূর্বে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। ফ্রুটব্যাগিং বা ওয়াটারপ্রুফ কাগজ দিয়ে প্রতিটি আম জড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে করে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। আমের রং ভালো থাকে। রপ্তানির ১৫ দিন আগে গাছে কীটনাশক স্প্রে বন্ধ করে দিতে হয়। এরপর আম পেড়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মোড়কজাত করা হয়।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ জুমবাংলাকে বলেন, ‘বাগানে নিরাপদ আম উৎপাদনের জন্য কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে ফ্রুটব্যাগিং ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে বিদেশে আম যাওয়ার যেসব বাঁধা তা দূর হবে।’